আমি মনে করি, আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবের দিন। আমি কোনোদিন আশা করিনি যে, ইতিহাসের এই মহানুভব ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করার সুযোগ আমার হবে এক মহতী অনুষ্ঠানে। সেজন্য আপনাদেরকে আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই। ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের বাইরে তাঁর কোনো সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভ করার সুযোগ আমার হয়নি। কেননা আমি একজন সাধারণ মানুষ ছিলাম, আজো আছি। তবে তাঁর সম্বন্ধে এখানে আমি দু-চার কথা বলব, বলব জাতীয় ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর স্থান সম্পর্কে। তাঁর জীবন-দর্শনের কথা বলা, এত গূঢ়তত্ত্ব বোঝার মতো ক্ষমতা আমার হয়তো সীমিত। তাই তাঁকে ব্যাপক দৃষ্টিতে আমি দেখবার চেষ্টা করব। এজন্য আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আজকাল দেখা যায় অনেক মৃত রাজনৈতিক নেতাকে সম্মান দেখানো হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে অনেককে জাতীয় নেতা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় গোরস্তানের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হচ্ছে। এই ফর্দে ক্রমাগত নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। একটি ব্যাপারে হয়তো অনেকে বেদনা অনুভব করেন, অনেকে ক্ষুব্ধ হন যে, এত বড় ফিরিস্তির মধ্যে, জাতীয় নেতার এত বড় লিস্টির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কোনো স্থান নেই, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিসৌধ তৈরি হয় না। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিন্তু এজন্য ক্ষুব্ধ নই। আমি আনন্দিত এজন্য যে, যে-মহানায়কের স্মৃতিতর্পণ করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, তিনি কোনো জাতীয় নেতা ছিলেন না। তিনি ইতিহাসের এক মহানায়ক। কোনো জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর তুলনা হয় না। গুটিকয়েক পয়গম্বরের নাম ইতিহাস স্মরণে রেখেছে। অনেক জাতীয় নেতার জন্ম হয়েছে, অনেক জন্ম হবে। জাতি যতদিন থাকবে নেতাও ততদিন আসবে, কিন্তু এই মহাপুরুষের জন্ম আর দ্বিতীয়বার হবে না। সেজন্য আমার মনে কোনো বেদনা নেই, কোনো ক্ষোভ আমাকে আচ্ছন্ন করেনি জাতীয় নেতার ফিরিস্তিতে বঙ্গবন্ধুর নাম না দেখে। স্মৃতিসৌধ? কোথায় কার সৌধ হবে। এ মহাপুরুষের স্মৃতিসৌধ, ইতিহাসের এই মহানায়কের স্মৃতিসৌধ, আবহমানকালের প্রবহমান ধারায় যে-ইতিহাস তৈরি হয়েছে, যে-ইতিহাস এদেশের মানুষ তৈরি করেছে, বাংলার মানুষের প্রতি অঙ্গনে তাঁর স্মৃতিসৌধ রয়েছে


0 Comments